GM MEDIA

ক্ষুধা নিয়ে সারা রাত হেঁটেছিলাম


সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন চিত্রনায়ক সোহেল রানা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রয়েছে তার স্মৃতির ভান্ডার। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তার সে অভিজ্ঞতা চলচ্চিত্রেও কাজে লাগিয়েছেন। পরবর্তী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা জানিয়েছেন চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। তার অভিনীত ও প্রযোজিত ‘ওরা ১১ জন’ ছবিটি এখনও মুক্তিযুদ্ধের সিনেমার মধ্যে সর্বাধিক আলোচিত ছবি। মুক্তিযুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা ও নানা প্রসঙ্গ নিয়ে আজকের ‘হ্যালো...’ বিভাগে কথা বলেছেন তিনি

* ‘ওরা ১১ জন-এর পর নিজের প্রযোজনা সংস্থা থেকে আর কোনো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি দেখা যায়নি। কেন?
** ওরা ১১ জন আমার কাছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ডকুমেন্টারি ফিল্ম। ছবিটি মুক্তির পর মানুষের যথেষ্ট ভালোবাসা ও সাফল্য পেল। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে তেমন একটা সাধুবাদ পাইনি। স্বাধীনতার এত বছর পরও বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য মাসুদ পারভেজ সরকারের কাছ থেকে পুরস্কৃত হননি কিংবা একটি ধন্যবাদপত্রও পাননি। এতে করে এ ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে সামনে আগানোর ইচ্ছে নষ্ট হয়ে গেল। তাই আর সেটা নিয়ে কাজ করা হয়নি।

* আপনার পর অনেকেই তো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি বানিয়েছেন। সেগুলোতে কী সরকারের সহযোগিতা ছিল?

** মুক্তিযুদ্ধের গল্পের আবহে অনেক ছবিই তো নির্মিত হয়েছে। সেগুলো প্রায়ই বাণিজ্যিক ছবি। মুক্তিযুদ্ধের আবহ কিছুটা দেখানো হয়েছে তাতে। সেগুলোকে আমি পুরোপুরি মুক্তিযুদ্ধের ছবি বলতে পারি না। সরকারের সহযোগিতা করার কিছু দেখিনি সেসব ছবিতে।

* মুক্তিযুদ্ধের কোন স্মৃতি এখনও আপনার সামনে জ্বলজ্বল করে?

** মুক্তিযুদ্ধকালীন অনেক ঘটনাই এখনও স্পষ্ট আমার কাছে। শুধু একদিনের ঘটনার কথা বলি। সারা রাত হেঁটে খুব ক্লান্ত হয়ে কেরানীগঞ্জের আটি বাজারের কাছে গেলাম। তখন প্রচণ্ড ক্ষুধা। আমার বন্ধু মোস্তফা মহসিন মন্টু বলল, দেখ কিছু খাওয়ার ব্যবস্থা করা যায় কিনা। আমরা গায়ে চাদর জড়িয়ে বাইরে বের হতাম। কারণ চাদরের আড়ালে স্টেনগান থাকত। আমরা হাঁটছিলাম খাবারের সন্ধানে। একটা বাড়ির সামনে গিয়ে দেখলাম কতগুলো মুরগি ছোটাছুটি করছে। কিছু মুরগি বাচ্চা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেখে মনে হল, এ বাড়িতে অনেক মুরগি রয়েছে। হয়তো ডিমও পাওয়া যাবে। হাতে যা পয়সা আছে তা দিয়ে ডিমগুলো কিনে নিলে আমরা খেতে পারব। বাড়িতে ঢুকে এক বয়স্ক মহিলার সঙ্গে দেখা। তাকে বললাম, ‘মা, আমাদের কাছে কিছু ডিম বিক্রি করবেন’? সে বলল, ‘বাবা ডিম তো নেই।’ শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। এরপর আমি মন খারাপ করে চলেই আসছিলাম। দশ-বিশ কদম হাঁটার পর ঘুরে আবার পেছন দিকে তাকালাম। দেখি একটি লোক ওই মহিলার কাছ থেকে দুটো ডিম নিয়ে যাচ্ছে। দেখেই আমার খুব রাগ হল। গায়ের চাদর সরিয়ে বন্দুক দেখালাম। কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম ডিম থাকা সত্ত্বেও আমাকে দিলেন না কেন? মহিলা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, ‘ডিম কোথায়?’ আমি বললাম, ‘এইমাত্র আপনি ওই লোকটিকে ডিম দিলেন, তখন মহিলা বললেন, ‘ওইটা তো ডিম নয়। আমি ওকে বদা দিয়েছি।’ ডিমকে ওরা আঞ্চলিক ভাষায় ‘বদা’ বলত। বুঝলাম, ডিম বলাতে মহিলা সেটি কী জিনিস চিনতে পারেননি। পরে ওই মহিলা আমাদের ত্রিশটা ডিম দিয়েছিলেন। কোনো দাম নেননি। ডিমগুলো এনে আমরা সিদ্ধ করেছি। একটা করে ডিমও আমাদের ভাগে পড়েনি। অর্ধেক করে খেয়েছি।

No comments

Powered by Blogger.