GM MEDIA

কর্মজীবনেই ফ্ল্যাটের মালিক হবেন সরকারি চাকরিজীবীরা


কর্মরত থাকাবস্থায় সরকারি চাকরিজীবীরা ফ্ল্যাট অথবা বাড়ির মালিক হতে পারবেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সহজ শর্তে পাবেন ফ্ল্যাট কেনার ঋণ। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বছরে সরকারি কর্মচারীদের এমন সুখবর দেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের গঠিত প্রতিবেদন সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। যেটি অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে শিগগির উত্থাপন করা হবে। সেখানে ইতিবাচক সাড়া মিললে দ্রুত পরবর্তী প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রাথমিক প্রস্তাব অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা এবং সর্বনিন্ম ৩৫ লাখ টাকা ঋণ প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। ফ্ল্যাট কেনা অথবা গৃহনির্মাণ বাবদ এ ঋণের সিলিং নির্ভর করবে সরকারি চাকুরের অর্জিত গ্রেডের ওপর। অর্থাৎ যিনি যে গ্রেডে অবস্থান করছেন তার ভিত্তিতে। সুপারিশ রিপোর্টে জাতীয় বেতন স্কেলের নির্ধারিত ১ থেকে ২০টি গ্রেড পর্যন্ত বিভিন্ন সিলিংয়ে রাজধানী, জেলা ও উপজেলা শহরের জন্য পৃথক হারে ঋণসীমা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়।

এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, গৃহনির্মাণ ঋণের সীমা যুগোপযোগী করার দাবি দীর্ঘদিনের। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। তিনি জানান, এ সংক্রান্ত গঠিত কমিটির রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর তা বিবেচনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এখন পরবর্তী পদক্ষেপ সেখান থেকে নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ফ্ল্যাট কেনার জন্য পর্যাপ্ত ঋণ পাওয়া তো দূরের কথা দীর্ঘদিন থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা গৃহনির্মাণ ঋণ বাবদ মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পেয়ে আসছেন। তাও আবার সাড়ে ১০ শতাংশ সুদে। অবশ্য কিস্তির সংখ্যা ১২০টি। চাকরিজীবনে একবারই মাত্র এ ঋণ নেয়া যায়। কেউ চাইলে গৃহনির্মাণ ঋণ পরিশোধের পর গৃহ মেরামত বাবদ ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিতে পারেন। সেখানে সুদের পরিমাণ একই, আর কিস্তি ৬০টি। যদিও কর্মকর্তাদের অনেকে এ ঋণ এখন আর নেন না। নিতান্তই প্রয়োজন পড়লে সাধারণ কর্মচারীরা গৃহনির্মাণ ঋণ নিয়ে থাকেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, কর্মকর্তারা এখন আর এ ঋণের জন্য আবেদন করেন না।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন পর্যায়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গৃহনির্মাণ ঋণের সীমা যুগোপযোগী করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে ২০১৬ সালের ২৯ আগস্ট ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। যার নেতৃত্বে ছিলেন ওই বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এআরএম নজমুস ছাকিব। কমিটি এক বছরের বেশি সময় বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করে। এরপর সার্বিক প্রস্তুতি শেষে গত ১২ ডিসেম্বর অর্থ সচিবের কাছে সুপারিশ প্রতিবেদন পেশ করা হয়। কমিটির সদস্যদের মধ্যে ছিলেন একই বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আজিজুল আলম, রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, যুগ্ম সচিব জালাল উদ্দিন, হাবিবুর রহমান, উপসচিব ড. মো. নজরুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা, বেগম বিলকিস জাহান রিমি ও সদস্য সচিব মোহাম্মদ রাশেদুল আমীন।
এ বিষয়ে এআরএম নজমুস ছাকিব শনিবার যুগান্তরকে বলেন, রিপোর্টটি জমা দেয়ার পরদিন তিনি অন্যত্র বদলি হয়েছেন। যেহেতু তিনি ওই মন্ত্রণালয়ে এখন কর্মরত নন তাই বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না।
কমিটির দেয়া সুপারিশের বিষয়ে সূত্র জানায়, এতে জাতীয় বেতন স্কেলের ১ম গ্রেড থেকে ৫ম গ্রেড পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার জন্য ৭৫ লাখ টাকা, জেলা শহরের জন্য ৬০ লাখ এবং উপজেলা পর্যায়ে ৫০ লাখ টাকা। এ ভাবে বিভিন্ন ধাপে ঋণের সিলিং নির্ধারণ করা হয়েছে। শেষ তিনটি ধাপে ১৮-২০ গ্রেড পর্যন্ত ঢাকার জন্য ৩৫ লাখ, জেলা পর্যায়ে ২৫ লাখ এবং জেলার বাইরে ২০ লাখ টাকা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। এ সংক্রান্ত নীতিমালার পূর্বের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে গৃহনির্মাণ ঋণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে প্রস্তাবিত ঋণসীমা অনুমোদন হলে উপরের দিকে থাকা কর্মকর্তারা ঋণের টাকা দিয়ে সহজে ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন। এর বাইরে অন্যরা চাইলে নিজের সঞ্চয় করা কিছু টাকা যুক্ত করে ফ্ল্যাট কেনা কঠিন কিছু হবে না। তবে রাজধানী ঢাকায় সম্ভব না হলেও অনেকে জেলা/উপজেলা পর্যায়ে ঋণের টাকায় বাড়ি নির্মাণ কিংবা ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ পাবেন। যেহেতু সহজ কিস্তিতে টাকা পরিশোধ হবে, সেহেতু চাকরিতে থাকাবস্থায় প্রত্যেকে ফ্ল্যাট কিংবা নিজে থাকার মতো বাড়ির মালিক হতে পারবেন।
এ বিষয়ে সচিবালয়ে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ব্যাংকে চাকরি করলে খুব সহজে তারা গৃহনির্মাণ কিংবা ফ্ল্যাট কেনার ঋণ পেয়ে যান। এক সময় তো ৩ শতাংশ সুদেও তারা ঋণ পেয়েছেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেক ব্যাংকার এখন বাড়ির মালিক। এ ছাড়া বর্তমানে যারা ব্যাংকে চাকরি করেন তাদের অনেকেই ফ্ল্যাট কিনতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তা হয়েও তারা এ সুবিধা পাচ্ছেন না। তারা বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঋণ দিলে কোনো ঝুঁকি নেই। কেননা, প্রতি মাসেই তার বেতন থেকে সরকার কিস্তি কেটে নিতে পারবে। কোনো খেলাপি হওয়ার সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে শুধু সরকারি চাকরিজীবী কেন, সরকারও লাভবান হবে।
একজন যুগ্ম সচিব বলেন, সিঙ্গাপুরে প্রশিক্ষণ সফরে গিয়ে তারা জানতে পারেন, সেখানে তাদের মানের কর্মকর্তাদের চাকরিজীবনের প্রথমদিনে ফ্ল্যাট ও গাড়ির চাবি ধরিয়ে দেয়া হয়। ফলে বাকি জীবনে তাদের বড় চিন্তার আর কী বাকি থাকল। এর ফলে দেশটি এগিয়েছে অবিশ্বাস্যভাবে। তিনি মনে করেন, আমাদের দেশ এখন স্বল্পউন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। তাই সরকারি কর্মচারীদের জন্য স্বল্পসুদে ও সহজ শর্তে ফ্ল্যাট ঋণ দেয়া খুবই জরুরি। আরও কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, চাকরিজীবনে সহজ কিস্তিতে কিংবা ভাড়ার টাকায় ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারলে সরকারি চাকরিজীবীদের নৈতিকতা ও কাজের গুণগত মান আরও উন্নত হবে। এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারের পৃথক কোয়ার্টার নির্মাণ করার চাপও অনেকাংশে কমে আসবে। এ জন্য তারা এই ভেবে খুবই আশাবাদী যে, বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষের বছরে তাদের দীর্ঘদিনের এ দাবি পূরণ হবে।

No comments

Powered by Blogger.