অতিরিক্ত ভাবনার হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করার উপায়
কোনও বিষয়ে খুব বেশি চিন্তা-ভাবনা আমাদের মনের সুখ-শান্তি বিনষ্ট করে। একই সঙ্গে এই অতিরিক্ত ভাবনার দুষ্টচক্র আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায়। মাথায় বারবার ঘুরতে থাকা ভাবনা আপনাকে কর্মক্ষেত্রেও করে তোলে অমনোযোগী ।
যখন আপনি খুব বেশি ভাবতে শুরু করেন, তখন আপনার 'বিবেচনা ক্ষমতা' আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এবং এর ফলশ্রুতিতে আপনি সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগতে থাকেন কিংবা নেতিবাচক সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হন।
অতিরিক্ত ভাবনার ফলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটা, ঝিমুনি, দ্রুত হৃদ স্পন্দন, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, ক্লান্তি, মাথা ব্যথা, পেশীতে ব্যথা, মনোযোগে সমস্যা, ঘাম, ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস প্রভৃতি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
দীর্ঘ মেয়াদে এই অতিরিক্ত ভাবনার আবর্তন চলতে থাকলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও এটি হার্ট অ্যাটাক, হজমে সমস্যা, স্মৃতি বিভ্রম, চুল পড়া, করোনারি রোগ, পেশীতে খিঁচুনি প্রভৃতি দীর্ঘ মেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার সম্ভাবনাকে বহু মাত্রায় বাড়িয়ে দেয়।
তাই সুস্থ ও স্বাভাবিক বাঁচতে চাইলে অবশ্যই এই 'অতি ভাবনার মায়াজাল' ছিন্ন করে বেড়িয়ে আসতে হবে।
চলুন জেনে নিই ভাবনার দুষ্টচক্রের আবর্তন থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায়।
সচেতনতাই পরিবর্তনের শুরু
কিভাবে অতি ভাবনা বন্ধ করবেন? সেক্ষেত্রে আপনার প্রথম পদক্ষেপ হবে- যখন আপনি খুব বেশি ভাবছেন তখন সেটাকে চিহ্নিত করা। তারপর মনে মনে বলতে হবে- আমি এখন খুব বেশি ভাবছি, এই ভাবনার কোনও ফল নেই। লম্বা শ্বাস নিন, প্রয়োজনে এক গ্লাস জল পান করুন, মাথা ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করুন, পুরো ঘটনাটি আরও একবার ভাবুন।
সাইকোলজি টুডেতে সাইকোথেরাপিস্ট অমি মোরিন এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, 'আপনাকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, এসব অতিরিক্ত চিন্তা-ভাবনার কোনও ইতিবাচক দিক নেই। আপনি যখন আপনার এই অতি চিন্তার বিষয়টি আগে থেকেই ধরে ফেলতে পারবেন, তখন এটি আস্তে আস্তে কমে যাবে।'
অন্য কারও মতামত নিন
আপনি একা একাই জীবনের সব জটিল বিষয় নিয়ে ভেবে চলেছেন। তবে কাছের কোনও বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তা শেয়ার করা বা কারও মতামত নেওয়ার মধ্য দিয়ে আপনি অন্য একটি দৃষ্টি ভঙ্গি পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে অন্যকে আপনার অতি ভাবনার বিষয়টি বলে তা সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাইতে পারেন। আপনি যদি আপনার দুশ্চিন্তার গভীর কারণ অনুসন্ধান করতে চান, তাহলে থেরাপির কথাও বিবেচনা করতে পারেন।
ইতিবাচক থাকুন
বেশির ভাগ সময় মানুষ খুব বেশি ভাবতে শুরু করে। কারণ তারা ভয় পেয়ে যায়, তারা সম্ভাব্য সব কিছুর নেতিবাচক ফলাফল নিয়ে ভাবতে থাকে। এর বদলে আপনার জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সবকিছুর ফলাফল নিয়েই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলুন। জন হপকিনস মেডিসিন জার্নাল অনুযায়ী, এই পদ্ধতিকে বলা হয় 'রিফেমিং'। এটি আপনাকে স্বাভাবিক করে তুলতে সক্ষম।
সুতরাং কিভাবে অতি ভাবনা বন্ধ করবেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়, বরং কিভাবে ভাবনাগুলিকে ইতিবাচক গঠনে বদলে দেবেন সেই প্রশ্নের উত্তর আপনাকে খুঁজতে হবে।
মনোযোগ ঘুরিয়ে দিন
যখন আপনি খুব বেশি ভাবনার কবলে পড়ে যাবেন, তখন চট করে আপনার অবস্থান পরিবর্তন করে নিন। এছাড়াও তখন আপনি অন্য কোন কাজে যেমন শরীরচর্চা, গান গাওয়া, নাচ করা বা বই পড়া প্রভৃতি দিকে আপনার মনোযোগ ঘুরিয়ে দিন। আপনি যত বেশি এই বাজে চিন্তাগুলি দূর করতে চাইবেন, সেগুলি ততবেশি ভেসে উঠবে। তাই সহজ সমাধান হলো অন্য ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে নিজের সময়ের বিনিয়োগ করা।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার করুন
জীবনে নতুন কিছুর পেছনে ছুটতে গিয়ে ইতিমধ্যে যা পেয়েছি, এর মধ্যে যা কিছু ইতিবাচক তার মর্মার্থ উপলব্ধি করতে ভুলে গেছি। ফলে না পাওয়া কিছু বা নেতিবাচক কিছুর জন্য আমাদের মনে উদ্বেগ-দুশ্চিন্তা হয় ঠিকই কিন্তু ভালো কিছু আমরা পাই না। তাই প্রতিদিন জীবনের ইতিবাচক দিকগুলি নিয়ে আমাদের কৃতজ্ঞতা অনুভব করা উচিত্। ফলে মন ইতিবাচক হয়ে ওঠে, হতাশা কমে যায় এবং দুশ্চিন্তা দূর হয়।
পার্ফেক্টশনিস্ট হতে চাইবেন না
কখনই সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক হয় না এবং এই বিষয়টি আমাদের সবাইকেই মেনে নিতে হবে। তাই সবকিছু পার্ফেক্ট হতে হবে এমন ভাবনা পরিত্যাগ করুন। পার্ফেক্ট হওয়ার থেকেও ক্রমাগত উন্নতি সাধনের মাঝে আনন্দ খুঁজে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
মেডিটেশন
ইতিবাচক কিছুর আশায় নিয়মিত মেডিটেশন করলে আমাদের নেতিবাচক ভাবনাগুলো দূর হয়ে যায়। ফলে উদ্বেগ দূর হয়, কর্মোদ্দীপনা বেড়ে যায় এবং মেডিটেশন আমাদের নিজের মনের উপর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণে সাহায্য করে।
নিজেকে মেনে নিতে শিখুন
দুশ্চিন্তার গোঁড়া অনেক সময় নিজের নেতিবাচক চিন্তার মধ্যে লুকিয়ে থাকে। আবার অনেক সময় অতি আত্মবিশ্বাসও হতে পারে বেশি ভাবনার কারণ।
No comments