GM MEDIA

স্বপ্নপূরনে আপনি শিক্ষক|লেখক সজীব অধিকারী

সজীব অধিকারী
গল্প: প্রিয় শিক্ষক। 
লেখক: সজীব অধিকারী।  

বড়লোক বাবার সন্তান হয়ে জম্ম নিয়েছিলাম তাই আদর পেয়ে একটা বাদর তৈরি হয়েছি!! 

ছোট বেলা থেকেই নিষিদ্ধ সকল জিনিসের প্রতি আমার প্রবল আকর্ষন,তাই বাবা ধরে বেঁধে খুলনা নেভি স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি করে দিয়েছে যেন আমি এবং আমার স্বাভাবের পরিবর্তন হয়!!! 

আজ আমার কলেজ জীবনে প্রথম দিন, চারপাশের মানুষ গুলো যেন খুব অচেনা তবে ওদের সবার সাথে আমার একটা মিল আছে এবং সেইটা হলো আমার গায়ের পরে থাকা সাদা ধবধবে ইউনিফ্রাম,এটা পরে নিজের কাছে নিজেকে সত্যি মদন মদন লাগছে!! যেহেতু কলেজের প্রথম দিন তাই সকল ছাত্রকে অডিটোরিয়াম রুমে বসিয়ে ব্রেন ওয়াস এবং প্রতিষ্ঠান এর বিভিন্ন নিয়মাবলী সম্পর্কে ধারনা দিচ্ছে,, তবে আমি যে খুব দুষ্টু আর চালাক তাই প্রথম ক্লাসে দুষ্টামি আর চালাকি শুরু করে দিয়েছি পাশের বেঞ্চে বসে থাকা ছোট খাটো একটা হাতির মত ছেলের সাথে*মানে ও খুব মোটা*!! 

কলেজে আমার নতুন বন্ধু পেয়ে গেলাম,আমার স্বাভাবের সাথে ওর স্বাভাবের অনেক মিল ছিল যেমন সিগারেট খাওয়া!!!! প্রায় প্রতিদিন ক্লাস শেষ অথবা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে শেখ আবু নাসের হাসপাতালের পিছনে গিয়ে দুই জন মিলে কী সুখের টান ই না দিতাম ওই কাগজে মোরানো তামাক ভরা নিকোটিনে,,দারুন একটা অনুভূতি হতো সম্ভবত একেই নেশা বলে!! কলেজটি যেহেতু নেভী দ্বারা পরিচালিত তাই কলেজ থেকে একটা কমিটি গঠন করা হয়েছিল যে কোন ছাত্র কোথায় যায়,কী করে না করে, কোন রাষ্টবিরধী কাজে জড়িত আছে কী না ইত্যাদি,, কলেজ কমিটির বিষয়ে আমাদের আমাদের জানা ছিল না তার জন্য আমি আর আমার বন্ধু যে সিগারেট এর ধোঁয়াতে নিজেকে পুলোকিত করে দিনের পর দিন কাঁটিয়ে দিচ্ছি সে খবর কলেজের পিন্সিপাল স্যার এর কানে চলে গিয়েছে।।। বাংলাদেশ নেভী দ্বারা পরিচালিত কলেজ তাই প্রচন্ড কড়াকড়ি,, বাড়ি থেকে গার্ডিয়ান না নিয়ে আসলে ক্লাস করতে দিবেই না,,, খুব কান্না করছিলাম ক্লাস রুমের বাইড়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুজনে তখন পিছন থেকে কে যেন আমার কাঁধে হাত রাখলো, একটু মাথা ঘুড়ে দেখি আমার ইংলিশ স্যার!! আমার আর আমার বন্ধুর পিঠে ছোট একটি চর দিয়ে বলে এই দুই গাধা কান্না বন্ধকর আমি দেখছি ব্যাপারটা কী করা যায়"!! ইংরেজি স্যার আমার আর আমার বন্ধুর হয়ে পিন্সিপাল স্যার এর কাছে অনুরোধ করলো যেন এবার এর মত আমাদের ক্ষমা করে দেয়।। ইংরেজি স্যার এর বিশেষ অনুরোধে পিন্সিপাল স্যার ক্ষমা ঠিক করেছিল ওই বার তবে একটি শর্ত দিয়েছিল"যে পরবর্তী সময় যদি আমরা আর সিগারেট খাই তাহলে আমাদের দুইজন সহ স্যার কে ও কলেজ থেকে বহিস্কার করা হবে" স্যার সব মেনে নিয়ে আমাদের নিয়ে একটি ক্লাস রুমে গিয়ে কিছু কথা বলতে শুরু করে।।কথা গুলো আমি আর আমার বন্ধু এক কান দিয়ে শুনে আর এক কান দিয়ে বের করে দিয়েছিলাম,কিন্তু তার একটা কথা আজ আমার জীবনকে বদলে দিবে কখন ও ভাবতে পারি নাই।স্যার বলেছিল আমাকে এবং আমার বন্ধুকে যে তোমারা দুইজন হয়তো বড়লোক বাবার আদরে বড় হওয়া সন্তান, তোমাদের হয়তো এই কলেজ থেকে টিসি দিলে তোমাদের বাবা অন্য কলেজে ডোনেশন দিয়ে ভর্তি করে দিবে কিন্তু আমার এই চাকরীটা খুব দরকার বাবা, খুবই দরকার! স্যার এর ওই কথাটির বলার ধরন শুনে হচ্ছিল যেন সে আমাদের কাছে অনুরোধ করছে দ্বাতীয় বার আর সিগারেট না খাই তার জন্য।আবার বলে উঠলো সত্যি এই চাকরীটা আমার খুব দরকার কারন আমার ঘরে আমার একটি সন্তান আছে এবং সে জন্মথেকে চোখে দেখতে পায় না, তোমাদের জন্য এই চাকরীটা চলে গেলে তখন আমি আমার সন্তানের চিকিৎসা করতে পরবো না কারন আমি তোমাদের দ্বায়ীত্ব নিয়েছি।।কথাটি বলে স্যার চোখের কোনে থেকে কিছু এটা মুছতে মুছতে চলে গেল!!! 

অনেক সময় বসে চিন্তা করলাম আর জীবনে সিগারেট খাব না,আমাদের জন্য একটা শিক্ষকে অপমানিত হতে দিব না!!! সেই দিন থেকে আর কখন ও সিগারেটা ধরি নাই,মন দিয়ে পড়াশোনা করেছি দুজনে এবং প্রতিটা সময় স্যার এর সেই চোখের কোনে জমে থাকা পানি নামক তরল পদার্থের কথা চিন্তা করে আমাদের করা দুষ্টামিও কমিয়ে দিয়েছি!!! দেখতে দেখতে দুটো বছর কেঁটে গেলো এবং আমি আর আমার সেই সিগারেট খাওয়া সঙ্গি মাধ্যমিক পরিক্ষাতে A+ পেয়েছি,আনন্দের আজ শেষ নেই আমাদের!! 

দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে গিয়ে স্যারকে দুই বন্ধু মিলে উঁচু করে ধরে লাফাতে শুরু করে দিলাম!! আমরা A+ পেয়েছি শুনে ইংরেজি স্যার পিন্সিপাল স্যার এর কাছে বলেছিল গর্ব করে যে আমরা সেই ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সিগারেট খাওয়া দুই মানিক রতন বন্ধু ভাল রেজাল্ট করেছি তার জন্য!!!! 

আজ জীবনের এই প্রান্তে দাঁড়ায়ে অনুভব করছি যে জীবনে বাবা মায়ের চেষ্টা ব্যার্থ হলেও একজন শিক্ষক এর চেষ্টা কখন ও ব্যার্থ হয় না,একজন শিক্ষক চাইলে একটি খারাপ পথে চলা ছাত্রকে ভালবাসা আর স্নেহ দিয়ে সঠিক পথে ফিড়াতে পারে!!!

একজন শিক্ষকই পারে একজন ছাত্রের ভেতরে লুকিয়ে থাকা প্রতিভা শক্তিকে সবার সামনে উপস্থাপন করতে, একজন শিক্ষকই পারে কোন বাবা মায়ের দেখা তার সন্তানকে নিয়ে স্বপ্নটা পূরন করতে!! সেলুট স্যার আপনাকে,,আপনার মত একজন আদর্শ শিক্ষক পেয়ে আজ আমি ধন্য,আজ আমি গর্বিত!!ছাত্রজীবন শ্রষ্ট শিক্ষকের মধ্যে আপনি অন্যতম হয়ে থাকবেন।। 

গল্পের সম্পূর্নটা কাল্পনিক তবে এমন ধরনের ঘটনা হয়তো আমাদের প্রতিটা ছাত্রের জীবনে রয়েছে,,,, পাঠকের কাছে অনুরোধ রইলো কমেন্টে আপনার জীবনের শ্রষ্ট শিক্ষকের নামটা লিখে জানাবেন।।

1 comment:

Powered by Blogger.