GM MEDIA

মায়ের ঋন শোধ | সজীব অধিকারী


গল্প: মায়ের ঋন 
শোধ লেখক: সজীব অধিকারী ।

গত বছর ডিসেম্বর মাসে কুয়েট এর CSE ডিপারমেন্টে থেকে পড়াশোনা শেষ করেছি, নিজের ভেতরে অন্য রকম ডিমান্ড কাজ করছে কারন দেশের অন্যতম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এর থেকে Engineering পড়াশোনা শেষ করেছি বলে কথা!!! 

২০১৮ সালের প্রথম দিকে মাল্টিন্যাশেনাল কম্পানির অধিনে একটি IT ফার্মে নির্বাহী পরিচালক পদে চাকরী পেয়েছি, মাসে বেতন ৯৬ হাজার টাকা দিবে প্রথমে!! চাকরী পেয়ে নিজের ডিমান্ড আরো বৃদ্ধি পেয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে কারন ৯৬ হাজার টাকা বেতন বলে কথা।। আমার এই অবস্থানে আসতে অনেক মানুষের কিছু ছোট ছোট অবদান রয়েছে তাই আমি আজ তাঁদের অবদান গুলোর ঋন শোধ করতে চাই কারন আমি আজ টাকাওয়ালা,,যে কথা সেই কাজ একটি লিস্ট করে আমাকে উপকার করা সকল মানুষের ঋন শোধ করে দিলাম!! আমার ব্যবস্থাপনা দেখে গতমাসে আমাকে কম্পানির হেড অফিস থেকে একটি ৪৯ লক্ষ টাকা দামের নিসান গাড়ি দিয়েছে এবং ধানমন্ডি ৩২ নং এ একটি বাড়ি!! বিষয়টা আমার কাছে অনেক অহংকার,,,, তাই আজ আমি আমার মায়ের ঋন শোধ করতে চাই!! ‌সেইদিন অফিস থেকে একটু আগে বেড়িয়ে গিয়েছি সরাসরি অফিস থেকে বাড়িতে গেলাম,,দেখি আমার মা রান্না করছে জন্য রান্না করছে ,,তাই তখন কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলাম!! ‌ ‌

আমি যখন খুব ছোট তখন আমার বাবা মারা গিয়েছিল, তখন থেকে আমি আর মা একসাথে থাকি এবং মা আমাকে অনেক কষ্ট করে বড় করে তুলেছে!! ‌ ‌সেইদিন রাতে টেবিলে খেতে খেতে মা কে বলেই দিলাম,মা আমি আজ অনেক টাকার মালিক তাই আমাকে বড় করতে তোমার সব কষ্টের ঋন আমি শোধ করতে চাই।। ‌

বলো তুমি কী চাও আমার কাছে?? মা খাওয়া বাদ নিয়ে কিছুটা সময় আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,,, মা: আমার ঋন শোধ করতে চাস তাই তো? আমি: হ্যাঁ,বলো তুমি কী চাও আমার কাছে?? মা: বাসার নিচে দোকান থেকে আমার জন্য ২টি পাঁকা কলা কিনে নিয়ে আয়্ যা!! আমি: ঠিক আছে ১০ মিনিট সময় দাও আমাকে!! মা: ২০ মিনিট সময় দিলাম তোকে!! #কলা নিকে বাসায় ফিড়তে ৩০ মিনিট সময় লেগে গেল,বাসায় ফিড়ে মায়ের রুমে গিয়ে বলি,,, আমি: মা এই নেও তোমার দুইটি পাঁকা কলা,বাজারের শ্রেষ্ট কলা!! মা: ১০ মিনিট লেট, তুই তো দেখেছিস আজ অনেক ভাত খেয়েছি তাই এখন এই কলা খেতে পারবো না!! আমি: তাহলে তোমার কাছে রেখে দাও সকালে খেও!! মা: না বাবা,এই কলা দুটো তোর কাছে আজ রাতের জন্য রাখবি এবং তোর বিছানায় পাশে কলা দুটি রেখে ঘুমিয়ে থাকবি"!

আমি: আচ্ছা মা ঠিক আছে।। মায়ের কথা মত কলা দুটি পাশে রেখে ঘুমিয়ে গেলাম!! সকালে মা নিজের থেকে আমাকে ডেকে তুলে আমার কাছে কলা দুইটি চাইলো,,কিন্তু কলা দুইটি রাতে আমার পিঠের নিচে চাপা পরে নষ্ট হয়ে গিয়েছে তাই সেই কলা দুইটি মা কে দিতে পারলাম না!! মা কে বলে উঠলাম তখন,,মা আমাকে ৫ মিনিট সময় দাও আমি নিচ থেকে দুইটি কলা এনে দিচ্ছি তোমাকে!! মা তখন বলে উঠলো যে আমি তোর কেনা টাকার কলা খেতে চাই না,তোকে শুধু বোঝাতে চাচ্ছিলাম যে মায়ের ঋন কোনদিন শোধ করা যায় না।। তোকে ১০ মাস ১০ দিন পেটে ধরেছি,জম্মের পর বুকের মাঝে নিয়ে ঘুমিয়েছি,শীতের রাতে বার বার প্রসাব করেছিস তখন তোর কষ্ট হবে তাই ভিজা খাতায় রাখি নাই,কত রাত পার করেছি তোকে পাশে রেখে কখন ও চাপা দিয়েছি বলে মনে পরে না,,, আর এক রাত তুই নিজের পাশে আমার জন্য কলা দুইটি রাখতে ব্যার্থ তো তুই আমার ঋন কী করে শোধ করবি তুই নিজেই বল!!!

আমি নিস্তব্দ হয়ে মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে কেঁদে দিয়ে নিজের ভুলটা বুঝতে পারলাম এবং তার পা ধরে ক্ষমা চাইলাম,,,বুঝতে পারলাম যে মায়ের ঋন কখন ও শোধ করা যায় না, আমি ভূল করেছি,,আমি অনেক বড় অপরাধ করেছি মায়ের ঋন শোধ করবার কথা চিন্তা করে!! #মা তুমি সত্যি শ্রেষ্ট আমাকে পেটে ধরে,আমাকে শীতের রাতে বুকে আগলে রেখে""তাই তোমার ঋন শোধ করা সম্ভব নয়"!

#গল্পটা সম্পূর্ন কাল্পনিক তবে বাস্তবতার বড় উদাহরন দিয়ে লিখতে চেষ্টা করেছি,,কারন এমন হাজারো সন্তান তার মায়ের ঋন শোধ করতে চায় একটু ভাল অবস্থায় গেলেই তাই গল্পটি লিখে তাঁদের ভূলটা সংশোধন এর চেষ্টা মাত্র।। ‌

No comments

Powered by Blogger.