GM MEDIA

জীবনের এক অদ্ভুদ বাস্তবতা | সজীব

জীবনের এক অদ্ভুদ বাস্তবতা
যখন আমি প্রাইমারি স্কুলে পড়ি তখন বাবার সাথে শুক্রবার এ বাইড়ে ঘুরতে বের হতাম কারন বাবা একজন সরকারী কর্মচারী তাই বাবার শুক্রবার ছাড়া সময়ই ছিল না।।

আমার ছোটবেলা কেটেছে খুলনা খালিশপুর প্লাটিনিয়াম জুট মিলের বাবাকে দেওয়া সরকারী কোয়াটার এর ভেতর তাই প্রায় সময় ই আমাকে নিয়ে বাবা খুলনা হাদিস পার্ক বা জাতি সংঘ শিশু পার্কে যেতেন বাবা।।

আমি প্রায় সময় দেখতাম বাবা কিছু মানুষকে তার মানিব্যাগ থেকে খুচরা টাকা গুল বের করে কিছু মানুষকে দিয়ে দিতো কিন্তু কেন আর কাঁদের দিত সেটা জানতাম না, এখন ও আমার মনে আছে কোন এক শুক্রবার বাবা যখন টাকা দিতে গিয়েছিল আগের দিন গুলোর মত তখন আমি বাবাকে জিঙ্গাসা করেছিলাম বাবা!বাবা! ও বাবা!! তুমি ওই নোংরা দেখতে মানুষ গুলোকে টাকা দেও কেন?? ওরা তোমার কী হয়? বলতে হবে আজ আমাকে আর যদি না বলো তাহলে আমি কিন্তু বাসায় গিয়ে মা কে সব বলেদিব যে বাবা রোজ শুক্রবারে পার্কে গিয়ে কিছু নোংরা মানুষকে টাকা দেয়,বাবা মাকে প্রচন্ড ভয় পেত তাই আমাকে একটু আদর করে বলে যে সজিব বাবা তুমি বড় হলে নিজেই বুঝতে পারবে কেন তোমার কাছে মনে হওয়া নোংরা মানুষ গুলোকে টাকা দেই আমি!! বাবার ওই কথা উপর ভিত্তি করে আবার জিঙ্গাসা করলাম বাবা আমি কবে বড় হবো?? (ছোট ছিলাম আমি তাই অবুঝ মানুষ যেমন প্রশ্ন করে আমার প্রশ্ন গুলো তার ব্যাতিক্রম ছিল না।

বাবা মিষ্টি একটা হাশি দিয়ে বলেছিল যেদিন তুমি নিজের থেকে রাস্তা পারাপার হতে পারবে সেই দিন তুমি বড়ো হবে!!

আজ আমি নিজের থেকে রাস্তা পার হতে শিখেছি, এখন আর বাবার সাথে পার্কে আশি না বন্ধুদের সাথে আশি,তবে এখন বাবার সেই কথাটা পার্কে প্রবেশ করা মাত্রই মনে পরে যায় গাছের নিচে বসে থাকা সেই ছোট বেলায় দেখা মানুষ গুলোর মত কিছু মানুষকে অন্যের কাছ থেকে হাত বাড়িয়ে টাকা নিতে দেখা মাত্রই,,, আজ আমি জীবনের এই পর্যায়ে এসে বুঝতে পেরেছি যারা অন্যের কাছ থেকে হাত বাড়িয়ে টাকা নেয় তাদের ফকির বা ভিক্ষুক বলে।।

আজ আমার খুব ইচ্ছা করছে ওদের সাথে একটু কথা বলতে যে কেন তারা অন্যের কাছ থেকে টাকা নেয়?কেন তারা কাজ করে না?? এবং শেষমেশ গিয়ে একজন ভিক্ষুকের কাছে জিঙ্গাসা করলাম যে চাচি আপনি ভিক্ষা কেন করেন?আপনার ছেলে মেয়ে নেই? ওই চাচি আমার কথায় উওর দিয়েছিল বাবা আমি চোখে দেখতে পাই না, ২টা ছেলে আছে কিন্তু বিয়ে করবার পর আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে তাই তোমাদের কাছ থেকে হাত পেতে ভিক্ষা নিয়ে কোন মতে বেঁচে আছি!! বৃদ্ধ ওই চাচীর কথা শুনে চোখ থেকে কখন যে পানি গড়িয়ে মাটির ক্ষুদ্র কনা ভিজে গেলে বুঝতেই পেলাম না, শুধু এটা বুঝতে পেরেছি যে আমার বাবা কেন এই মানুষ গুলোকে সাহায্য করতো? কেন আমাকে বলেছিল যে সজিব বড় হলে তুমি নিজেই বুঝতে পারবে এই মানুষ গুলো হাত পেতে কেন ভিক্ষা নিচ্ছে!"  ‌

হ্যাঁ,, আমি আজ বড় হয়েছি,বুঝতে শিখেছি যে কতটা বিপদে পরলে মানুষ অন্য একজন ব্যাক্তির কাছ থেকে হাত পেতে টাকা নেয়,কতটা অসহায় হলে মানুষ অন্যের উপর নির্ভর করে জীবন অতিবাহিত করে!!নিস্তাব্দ আমি,বন্ধ আমার কন্ঠস্বর,বাস্তবতা যেন আকরে ধরেছে আমাকে,নিজের অনিচ্ছা সত্তেও চোখের থেকে পানি গড়িয়ে গড়িয়ে পরছে মাটিতে,,,,

আজ বাবা কাছে নয় সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রশ্ন করতে খুব ইচ্ছা করছে কেন তিনি এই মানুষ গুলোর সাথে এতটা নিষ্টুর ব্যবহার করেছে??

তবে প্রশ্নগুলো নিজের মধ্যে প্রশ্ন হয়েই রয়ে গিয়েছে কারন আমি হয়তো আবেগে মধ্যে রয়েছি তাদের এই নির্মম অবস্থা দেখে কারন আমি মানুষ আর মানুষ আবেগ প্রবন তাই।।।

বর্তমানে ১২ বছর আগে করা আমার বাবার সেই মহৎ কাজটি করবার দ্বায়ীত্ব আমি নিয়েছি, নিজের হাত খরচ থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে যতটা সম্ভব ওই রাস্তায়,পার্কে রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে পরে থাকা ভিক্ষারী কে যতটা সম্ভব সাহায্য করে চলেছি!! এখন আমার বাবা এখন আমাকে নিয়ে গর্ব করে যে আমি তার আদর্শ আর মানবতাকে অবলম্বন করে বড় হয়েছি এবং যতটা সম্ভব নিজের মত করে ওদের একটু হলেও সাহায্য করে চলেছি।।

মনে মনে চিন্তা করি কিছুদিন পর আমার সন্তান হয়তো আমাকে ই আমার করা বাবাকে সেই প্রশ্নটা করবে যে কেন ওই লোক গুলোকে টাকা আমি দেই?? হয়তো ওইদিন আমার সন্তানের প্রশ্নের আমার দেওয়া উওরটা একই থাকবে যে উওরটা আমার বাবা আমাকে দিয়েছিল "বাবা বড় হলে তুমি নিজেই বুঝতে পারবে তোমার বাবা কেন এই লোক গুলোকে টাকা দিচ্ছে"",,এই গল্পের কোন শেষ নেই যতদিন না পৃথীবি শেষ হবে ততদিন ।

(জীবনের এক অদ্ভুদ বাস্তবতা) লেখক: সজীব অধিকারী।

No comments

Powered by Blogger.